নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষা ক্ষেত্রে আসছে বড় পরিবর্তন! সরকার ২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিকে নতুন পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালুর ঘোষণা দিয়েছে, যা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে। বিস্তারিত জানুন।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা এসেছে। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে একটি পরিমার্জিত ও নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। এই যুগান্তকারী পরিবর্তনটি প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শুরু হবে এবং পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং যুগোপযোগী করে তোলা।
নতুন শিক্ষাক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কীভাবে হবে?
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, এই বিশাল পরিবর্তন কীভাবে কার্যকর করা হবে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, একবারে সব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
- প্রথম ধাপ: ২০২৭ সালে শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
- পরবর্তী ধাপগুলো: এরপর প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের মতে, “একসঙ্গে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা সুচিন্তিত নয়।” এই ধীর এবং পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নতুন পদ্ধতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে যথেষ্ট সময় দেবে।
কেন এই শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হচ্ছে?
গত বছর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শ্রেণিতে একটি নতুন শিক্ষাক্রম চালু ছিল। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে মাধ্যমিক স্তরে সেই শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের পুরনো শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়। তবে, প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রমটিই বহাল রাখা হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, “আমরা যদি নতুন স্বপ্ন দেখি, যদি নতুন পরিকল্পনা করি, সেখানে প্রযুক্তির বিষয় থাকবে, অন্তর্ভুক্তির বিষয় থাকবে… নিশ্চয়ই বর্তমানের যে শিক্ষাক্রম তার থেকে মুক্তচিন্তা করতে হবে।” তাঁর মতে, একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এমন একটি শিক্ষাক্রম তৈরি করা প্রয়োজন যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তচিন্তা, দায়বদ্ধতা এবং ন্যায়বিচারের বোধ জাগিয়ে তুলবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ইতোমধ্যে পরিমার্জিত এই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে।
শিক্ষকদের জন্য দুটি বড় খবর
সংবাদ সম্মেলনে শুধু শিক্ষাক্রম নিয়েই নয়, শিক্ষকদের জন্যও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে:
- অনলাইনে শিক্ষক বদলি: আগামী ১ জুলাই থেকে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের বদলির প্রক্রিয়া অনলাইনে শুরু হবে। এর কয়েকমাসের মধ্যেই বিদ্যালয় পর্যায়েও একই ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
- অবসর ও কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ: বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার জন্য সরকার ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড এবং ২০০ কোটি টাকা নগদ বরাদ্দ দিয়েছে। এটি শিক্ষকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি বড় পদক্ষেপ।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
প্রশ্ন: নতুন শিক্ষাক্রম কবে থেকে চালু হবে?
উত্তর: ২০২৭ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন: কোন শ্রেণিতে প্রথম এটি চালু করা হবে?
উত্তর: প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে এবং এরপর পর্যায়ক্রমে উপরের শ্রেণিগুলোতে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রশ্ন: তাহলে বর্তমান শিক্ষাক্রমের কী হবে?
উত্তর: মাধ্যমিক পর্যায়ে বর্তমানে চালু থাকা ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমটি ২০২৭ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে প্রাথমিকে নতুন শিক্ষাক্রমই চালু থাকছে।
এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি নতুন পথে চালিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আরও নতুন তথ্যের জন্য আমাদের শিক্ষা সংবাদ বিভাগের সাথে থাকুন এবং যেকোনো চাকরির আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
লেখক:
তানিয়া সুলতানা বিশেষত্ব: শিক্ষা, স্কলারশিপ, এবং উচ্চশিক্ষা
তানিয়া সুলতানা একজন অভিজ্ঞ শিক্ষা বিশ্লেষক এবং গবেষক, যার বাংলাদেশী এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ১২ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তানিয়া বিদেশে স্কলারশিপ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং অ্যাকাডেমিক পথের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের গাইড করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ।
দক্ষতা: উচ্চশিক্ষা, বিশ্বব্যাপী স্কলারশিপ, অ্যাকাডেমিক কাউন্সেলিং।
Dhaka Alert একটি তথ্যভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি পাবেন বাংলাদেশের সর্বশেষ চাকরির খবর, ভর্তি তথ্য, শিক্ষা সংবাদ, স্কলারশিপ আপডেট এবং ক্যারিয়ার গাইডলাইন। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি নির্ভরযোগ্য, আপ-টু-ডেট এবং সহায়ক মাধ্যম গড়ে তোলা, যা শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী এবং সাধারণ পাঠকের তথ্য চাহিদা পূরণ করবে।