বিসিএস প্রিলি পাসের কৌশল: নতুন ও অভিজ্ঞদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

বিসিএস প্রিলি পাসের কৌশল

বিসিএস প্রিলি পাসের কৌশল: বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করবেন? নতুন ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের জন্য সিলেবাস, বই নির্বাচন, মডেল টেস্ট, বিসিএস প্রিলি পাসের কৌশল ও সময় ব্যবস্থাপনার কার্যকরী কৌশল জানুন।

বিসিএস প্রিলি পাসের কৌশল: নতুন ও অভিজ্ঞদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

“বিসিএস প্রিলিতে পাস করা কি আসলেই খুব কঠিন?”—এই প্রশ্নটি প্রায় প্রতিটি চাকরিপ্রার্থীর মনে একবার হলেও উঁকি দেয়। সত্যি কথা বলতে, এটি একদম সহজ নয়, আবার অসম্ভব কঠিনও নয়। হাজার হাজার প্রার্থীর ভিড়ে সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকর কৌশলই আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

এই লেখায় আমরা নতুন এবং অভিজ্ঞ—উভয় ধরনের পরীক্ষার্থীদের জন্য বিসিএস প্রিলিমিনারি পাসের একটি পূর্ণাঙ্গ কৌশল ও রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করব।

একনজরে বিসিএস প্রিলি জয়ের মূলমন্ত্র

  • সিলেবাস ও প্রশ্ন বিশ্লেষণ: সিলেবাস বুঝে বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করা প্রস্তুতির প্রথম ধাপ।
  • ভিত্তি তৈরি: একটি অ্যানালাইসিসভিত্তিক বই (যেমন: ‘বিসিএস প্রিলিমিনারি অ্যানালাইসিস’) ভালোভাবে শেষ করে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো।
  • বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা: সিরিজের বই এবং পাঠ্যবই থেকে সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ টপিক পড়া।
  • জব সল্যুশন: বিগত সালের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করে কমন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানো।
  • মডেল টেস্ট: সময় ধরে পরীক্ষা দিয়ে নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং নির্ভুলতা বাড়ানো।

প্রস্তুতির ভিন্নতা: আপনি নতুন নাকি অভিজ্ঞ?

বিসিএস পরীক্ষার্থী মূলত দুই ধরনের, তাই দুজনের প্রস্তুতির ধরনেও ভিন্নতা থাকা উচিত।

  1. একেবারে নতুন: যারা প্রথমবারের মতো বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
  2. অভিজ্ঞ: যারা আগে এক বা একাধিকবার বিসিএস প্রিলি দিয়েছেন।

আসুন, দুই ধরনের প্রার্থীদের জন্য আলাদা কৌশল জেনে নেওয়া যাক।

শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতি (নতুনদের জন্য)

যারা প্রথমবার বিসিএস দেবেন, তাদের মনে “কীভাবে শুরু করব?” বা “এখনও কি সম্ভব?”—এর মতো প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। বিশ্বাস করুন, হাতে থাকা সময়কে পরিকল্পনা মাফিক ব্যবহার করলে শূন্য থেকে শুরু করেও ভালো করা সম্ভব।

ধাপ-১: সিলেবাস ও প্রশ্নব্যাংক বিশ্লেষণ

প্রথমে বিসিএস প্রিলির সিলেবাসটি ভালোভাবে দেখুন এবং বিগত বছরের প্রশ্নগুলো (বিশেষত ৩৫তম থেকে সর্বশেষ বিসিএস পর্যন্ত) ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। এতে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন এবং অনেক প্রশ্ন রিপিট হলে কমনও পাবেন। এর জন্য প্রফেসর’স, ওরাকল বা অ্যাসিওরেন্স সিরিজের প্রশ্নব্যাংক অনুসরণ করতে পারেন।

ধাপ-২: ভয়কে জয় করুন

বাজার থেকে ‘বিসিএস প্রিলিমিনারি অ্যানালাইসিস’-এর মতো একটি বই সংগ্রহ করে বুঝে বুঝে অন্তত দুইবার শেষ করুন। এই বইটি আপনাকে কোন টপিক থেকে কতবার প্রশ্ন এসেছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেবে, যা আপনার ভয় কমিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।

ধাপ-৩: বিষয়ভিত্তিক ভিত্তি মজবুত করুন

এবার যেকোনো একটি ভালো সিরিজের (যেমন: এমপিথ্রি/প্রফেসর’স/অ্যাসিওরেন্স) বিষয়ভিত্তিক বই থেকে সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো পড়ুন। পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণির ‘ভূগোল ও পরিবেশ’, ‘বাংলা ব্যাকরণ’ এবং সাধারণ গণিত বইগুলো অবশ্যই পড়বেন। ভূগোল বই থেকে প্রায়ই হুবহু প্রশ্ন কমন আসে।

ধাপ-৪: জব সল্যুশন পড়ুন

বিগত বছরের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে বিসিএসে প্রচুর প্রশ্ন রিপিট হয়। তাই একটি ভালো মানের জব সল্যুশন (যেমন: প্রফেসর’স বা ওরাকল) বই থেকে প্রতিদিন কিছু প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়ুন।

ধাপ-৫: মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই

প্রস্তুতির শেষ ধাপে ভালো মানের এক বা দুটি মডেল টেস্ট বই (যেমন: ‘বিসিএস রিয়েল মডেল টেস্ট’ বা অন্য যেকোনো সিরিজ) কিনে সময় ধরে পরীক্ষা দিন। যে বিষয়ে নম্বর কম আসবে, সে বিষয়টি আবার ঝালিয়ে নিন।

অভিজ্ঞদের জন্য বিশেষ কৌশল (যারা আগে প্রিলি দিয়েছেন)

আপনারা যেহেতু এই পথের পথিক, তাই আপনাদের প্রস্তুতি অনেকটাই গোছানো। আপনাদের জন্য মূল লক্ষ্য হলো ভুলগুলো শুধরে নেওয়া এবং প্রস্তুতিকে আরও নিখুঁত করা।

  • টার্গেট ঠিক করুন: সাধারণ বিসিএসে প্রিলির নম্বর যোগ হয় না, কেবল পাস করলেই হয়। তাই ১২০+ নম্বরকে একটি ‘সেফ জোন’ হিসেবে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিন। দুনিয়ার সবকিছু পড়ার প্রয়োজন নেই।
  • বেশি বেশি এমসিকিউ সমাধান: প্রস্তুতির এই পর্যায়ে নতুন কিছু পড়ার চেয়ে বেশি বেশি এমসিকিউ সমাধান করুন। ভালো মানের ২-৩টি মডেল টেস্ট বই কিনে সবগুলো প্রশ্ন সমাধান করে ফেলুন। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো বারবার অনুশীলন করলে পরীক্ষায় কমন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
  • দুর্বলতায় ফোকাস করুন: মডেল টেস্ট দিয়ে দেখুন কোন বিষয়ে বা কোন ধরনের প্রশ্নে বারবার ভুল হচ্ছে। সেই নির্দিষ্ট টপিকটি মূল বই থেকে আবার পড়ে নিন।
  • সাম্প্রতিক তথ্যে চোখ রাখুন: পরীক্ষার আগে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়ুন এবং দৈনিক পত্রিকা বা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ার অভ্যাস বজায় রাখুন।

শেষ কথা: সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়

মনে রাখবেন, প্রতিযোগিতা যেহেতু বেশি, তাই গতানুগতিক পদ্ধতিতে পড়ে সাফল্য পাওয়া কঠিন। আপনাকে হতে হবে কৌশলী এবং পরিশ্রমী। মাঝখানের এই সময়টুকু আপনার এবং আপনার পরিবারের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না; যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে সুযোগ নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। আপনার প্রতিটি ঘণ্টার বাড়তি পড়া আপনাকে সাফল্যের পথে এক ধাপ এগিয়ে দেবে।

লেখা: নুসরাত জাহান মিতু, অভিজ্ঞ ক্যারিয়ার পরামর্শক.

আরও পড়ুনএমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কৌশল: স্মার্ট প্রস্তুতি ও রিভিশন

Writer: নুসরাত জাহান মিতু
Exit mobile version