অনার্সে ভর্তির সুযোগ: স্টাডি গ্যাপ কত বছর গ্রহণযোগ্য?

অনার্সে ভর্তির সুযোগ

কত বছর গ্যাপ দিয়ে অনার্স করা যাবে: পড়াশোনায় বিরতি পড়েছে? চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশের পাবলিক, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তির জন্য কত বছরের স্টাডি গ্যাপ গ্রহণযোগ্য, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। আপনার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে সঠিক তথ্য ও নির্দেশনা খুঁজুন এখানে।

কত বছর গ্যাপ দিয়ে অনার্স করা যাবে

উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) পাশের পর অনেক শিক্ষার্থীর জীবনেই সাময়িক বিরতি আসতে পারে। আর্থিক সমস্যা, পারিবারিক দায়িত্ব, স্বাস্থ্যগত কারণ কিংবা ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দ্বিতীয়বার চেষ্টা করার মানসিকতা—এরকম নানা কারণেই মূলত এই ‘স্টাডি গ্যাপ’ বা পড়াশোনায় বিরতি তৈরি হয়। এই বিরতির পর যখন শিক্ষার্থীরা আবারও অনার্সে ভর্তি হতে চান, তখন তাদের মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি উঁকি দেয়: কত বছর গ্যাপ দিয়ে অনার্স করা যাবে?

এই প্রশ্নের উত্তরটি নির্দিষ্ট নয়, কারণ বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবলিক, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) নিয়মকানুন ভিন্ন। এই প্রতিবেদনে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য স্টাডি গ্যাপের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিস্তারিত ও বাস্তবসম্মত আলোচনা তুলে ধরব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন অনুযায়ী স্টাডি গ্যাপের নিয়মাবলী

বাংলাদেশে মূলত তিন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেকটির ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্টাডি গ্যাপ সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করা হয়।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: সেকেন্ড টাইমের সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা

দেশের প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স (Honours) কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। স্টাডি গ্যাপের ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ম সবচেয়ে কঠোর।

  • যারা সদ্য HSC পাশ করেছেন: সাধারণত, যে বছর শিক্ষার্থী HSC পাশ করে, সেই বছরই ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারে।
  • সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা: কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয়। এর মানে হলো, HSC পাশের পরের বছরও তারা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ১ বছরের স্টাডি গ্যাপ গ্রহণযোগ্য।
    • উদাহরণস্বরূপ: ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গঠিত GST (General, Science & Technology) গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেকেন্ড টাইমারদের জন্য ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখে। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (Jahangirnagar University), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (BUP) এর মতো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়েও এই সুযোগ রয়েছে।
  • যেখানে সুযোগ নেই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো শীর্ষস্থানীয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ভর্তির সুযোগ নেই। অর্থাৎ, HSC পাশের বছরেই কেবল আবেদন করা যায়।

পরামর্শ: কোনো শিক্ষার্থী যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লক্ষ্য নিয়ে এক বছর বিরতি দেন, তবে তাকে অবশ্যই আগে থেকে জেনে নিতে হবে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ভর্তির সুযোগ আছে কিনা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: নিয়মকানুনের কঠোরতা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অনার্স প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে স্টাডি গ্যাপের নিয়ম বেশ সুস্পষ্ট এবং কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। এখানে ভর্তি প্রক্রিয়া মূলত SSC ও HSC পরীক্ষার ফলাফলের (জিপিএ) উপর ভিত্তি করে সম্পন্ন হয়, কোনো ভর্তি পরীক্ষা হয় না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী:

  • HSC পাশের বছর: আবেদনকারীকে অবশ্যই ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বছরে HSC বা সমমান পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের ২০২৩ বা ২০২৪ সালে HSC পাশ করা বাধ্যতামূলক ছিল।
  • SSC পাশের বছর: একইভাবে, SSC পাশের জন্যও একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা (যেমন: ২০২১ বা ২০২২ সাল) বেঁধে দেওয়া হয়।

এই নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স (Honours Program) করতে হলে HSC পাশের পর সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ বছরের বেশি স্টাডি গ্যাপ থাকলে আবেদন করা প্রায় অসম্ভব। যারা বেশ কয়েক বছর আগে পাশ করেছেন, তাদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই।

বাস্তব অভিজ্ঞতা: অনেকেই ৫/৬ বছর আগে HSC পাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তির চেষ্টা করেন, কিন্তু বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী তা সম্ভব হয় না। তাদের জন্য বিকল্প হতে পারে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়: নমনীয়তা ও সুযোগ

স্টাডি গ্যাপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নমনীয়তা প্রদর্শন করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যাদের পড়াশোনায় দীর্ঘ বিরতি রয়েছে, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ।

  • গ্যাপের সময়সীমা: নির্দিষ্ট কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম না থাকলেও সাধারণত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো HSC পাশের পর ৫ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত স্টাডি গ্যাপ গ্রহণ করে। কিছু ক্ষেত্রে এই সময়সীমা আরও বেশি হতে পারে।
  • বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক নীতিমালা: প্রতিটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভর্তি নীতিমালা রয়েছে। তাই আবেদনের পূর্বে নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন অফিসে যোগাযোগ করে তাদের স্টাডি গ্যাপ সংক্রান্ত নিয়ম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
  • কেন এই নমনীয়তা? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দেয়। একজন শিক্ষার্থী কেন বিরতি নিয়েছিলেন, সেই কারণটি যদি যৌক্তিক হয় (যেমন: চাকরি, অসুস্থতা, বিদেশে অবস্থান), তবে কর্তৃপক্ষ তা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করে।

ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা: একজন শিক্ষার্থী, যিনি আর্থিক প্রয়োজনে HSC পাশের পর ৪ বছর চাকরি করেছেন, তিনি পরবর্তীতে একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফলভাবে অনার্স সম্পন্ন করেন। তার ক্ষেত্রে স্টাডি গ্যাপ কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি, কারণ তিনি তার কাজের অভিজ্ঞতাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছিলেন।

আরও পড়ুনরাশিয়ায় পড়াশোনা: রোলিং ইন্টেকের সুযোগ ও স্কলারশিপসহ বিস্তারিত গাইড

Exit mobile version