রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ই-কার সেবা চালু হচ্ছে: স্কলারশিপ ও ডাইনিং ভর্তুকির উদ্যোগ

Rajshahi University Alumni Association (RUAA) launches e-car service, scholarships, and special training for students.

0

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে যাতায়াত এবং কল্যাণের স্বার্থে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুয়া)। আগামী মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে চালু হতে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ইলেক্ট্রনিক-কার (ই-কার) সেবা

গতকাল বৃহস্পতিবার (তারিখ উল্লেখ নেই, তবে গত সপ্তাহে) বিকেলে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়। এই উদ্যোগটি কেবল যাতায়াত সমস্যার সমাধান করবে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধনের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাদের নির্বাচনী ওয়াদা বাস্তবায়নের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এই ই-কার সেবার পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা।

ই-কার সেবা: মাসখানেকের মধ্যে বাস্তবায়ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন সুবিশাল। ক্লাসে যাওয়া-আসা, বিভাগ থেকে হলে ফেরা কিংবা লাইব্রেরিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রায়শই দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই রুয়া ই-কার সেবার উদ্যোগ নিয়েছে।

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ বছরের ইতিহাসে প্রথম অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের পর এটিই আমাদের প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটির সভা।’

তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা আশা করি, এটা স্বল্প সময়ের মধ্যে, ইনশা আল্লাহ মাসখানেকের মধ্যে আমাদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে।’

তবে, কতটি ই-কার চালু করা হবে—এই বিষয়ে চূড়ান্ত সংখ্যা এখনো নির্ধারিত হয়নি। সভাপতি জানান, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রয়োজন এবং অ্যালামনাইয়ের আর্থিক সামর্থ্যকে সমন্বয় করেই ই-কারের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।

শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আরও একাধিক বড় সিদ্ধান্ত

ই-কার চালুর পাশাপাশি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগগুলো সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার এবং দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

১. মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খুব শিগগিরই মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ বা বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে। উচ্চশিক্ষায় মেধার সঠিক মূল্যায়ন এবং আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই বৃত্তিটি অনেক ছাত্রছাত্রীর পড়ালেখার গতিকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে।

২. চাকরির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ

স্নাতকোত্তর শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা যেন চাকরির বাজারে আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রবেশ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

  • লক্ষ্য: শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
  • পদ্ধতি: এ সংক্রান্ত একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা প্রশিক্ষণের ধরণ ও রূপরেখা তৈরি করবে। এই প্রশিক্ষণ তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।

৩. হলের ডাইনিংয়ে ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা

শিক্ষার্থীদের হলের ডাইনিংয়ে ভর্তুকি দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই ব্যাপারেও আমরা খুব সিরিয়াসলি আলোচনা করেছি এবং এটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করব।’ যদি এই ভর্তুকি বাস্তবায়িত হয়, তবে শিক্ষার্থীদের খাবারের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

য়ার পূর্ববর্তী কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সংবাদ সম্মেলনে রুয়া সভাপতি অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ববর্তী কিছু ইতিবাচক কার্যক্রম তুলে ধরেন, যা তাদের আন্তরিকতা প্রমাণ করে।

পূর্ববর্তী কার্যক্রম

গত মাসে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে রুয়ার পক্ষ থেকে ১০টি বাস সরবরাহ করা হয়েছিল, যা শিক্ষার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতে খুবই সহায়ক হয়েছিল। এই ধরনের সহযোগিতা অ্যালামনাই এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি চমৎকার সেতুবন্ধন তৈরি করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অ্যাসোসিয়েশনের সামনে আরও কিছু বড় পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে:

  • দ্রুততম সময়ের মধ্যে অ্যালামনাইয়ের একটি পুনর্মিলনী আয়োজন করা।
  • অ্যালামনাইয়ের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা।
  • শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানেও পর্যায়ক্রমে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে সভাপতি এই বাস্তব সত্যটি মনে করিয়ে দেন, ‘কিন্তু সব চিন্তার সঙ্গেই অর্থ জড়িত। আমরা যদি অর্থ সংগ্রহ করতে পারি, অনেক কিছুই করতে পারব।’ অর্থাৎ, এই মহৎ উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন মূলত অ্যালামনাইয়ের আর্থিক সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এই নতুন উদ্যোগগুলো প্রমাণ করে, সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় বিদ্যাপীঠের প্রতি কতটা দায়িত্বশীল। ই-কার সেবার মতো পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ থেকে শুরু করে স্কলারশিপ এবং ডাইনিং ভর্তুকির মতো মানবিক আলোচনা—সবকিছুই রাবি শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। আগামী মাসখানেকের মধ্যেই ই-কার সেবার বাস্তবায়ন হলে তা হবে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

আরও পড়ুনআরএফএল গ্রুপ-এ ট্রেইনি জোনাল ম্যানেজার (TZM) পদে চাকরি

Leave A Reply

Your email address will not be published.