বিসিএস ক্যাডার লিস্ট: বিসিএস ক্যাডার লিস্ট, ক্যাডার পছন্দক্রমের নিয়ম, বেতন কাঠামো, যোগ্যতা এবং সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানুন। আপনার স্বপ্নের বিসিএস ক্যাডার বেছে নেওয়ার পূর্ণাঙ্গ গাইড।
বিসিএস ক্যাডার লিস্ট: আপনার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ
বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামূলক সরকারি চাকরি পরীক্ষা। দেশের সেরা মেধাবীদের মধ্য থেকে ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারক ও प्रशासক বাছাই করার এই প্রক্রিয়ায় সফল হওয়া লক্ষ লক্ষ তরুণের স্বপ্ন। আপনার এই স্বপ্নযাত্রাকে সহজ করতে, বিসিএস ক্যাডার লিস্ট, যোগ্যতা, বেতন এবং পছন্দক্রমের কৌশল নিয়ে আজকের এই পূর্ণাঙ্গ আলোচনা।
সঠিক ক্যাডার নির্বাচন আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। চলুন, বিসিএস জগতের খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক।
বিসিএস কী এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষাটি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) দ্বারা পরিচালিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে (ক্যাডার) সৎ, যোগ্য এবং মেধাবী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার পদে যোগদান করেন, তারা দেশের প্রশাসনিক, আইন-শৃঙ্খলা, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ বিভিন্ন খাতে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখেন। এটি শুধু একটি চাকরি নয়, বরং দেশ সেবার এক বিশাল সুযোগ।
বিসিএস পরীক্ষার ধাপ: ৩টি স্তর
বিসিএস পরীক্ষা মূলত একটি তিন-স্তরবিশিষ্ট বাছাই প্রক্রিয়া। প্রতিটি ধাপে উত্তীর্ণ হয়েই চূড়ান্ত সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হয়।
- প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: এটি একটি বাছাই পরীক্ষা, যেখানে বহু-নির্বাচনী প্রশ্নের (MCQ) মাধ্যমে প্রার্থীদের প্রাথমিক জ্ঞান যাচাই করা হয়।
- লিখিত পরীক্ষা: এখানে প্রার্থীদের বিষয়ভিত্তিক গভীর জ্ঞান, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং লেখার দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়।
- মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা): এটিই চূড়ান্ত ধাপ, যেখানে প্রার্থীদের ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, মানসিক দক্ষতা এবং সমসাময়িক বিষয়ে জ্ঞান পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বিসিএস ক্যাডার কত প্রকার ও কী কী?
বিসিএস ক্যাডারগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, যা পরীক্ষার্থীদের তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আগ্রহ অনুযায়ী বেছে নিতে সাহায্য করে।
- সাধারণ ক্যাডার (General Cadre): যেকোনো বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা এই ক্যাডারগুলোর জন্য আবেদন করতে পারেন। যেমন: প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র।
- কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার (Technical/Professional Cadre): এই ক্যাডারগুলোর জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ে পেশাগত ডিগ্রি বা শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। যেমন: স্বাস্থ্য (ডাক্তার), কৃষি, প্রকৌশল।
সম্পূর্ণ বিসিএস ক্যাডার লিস্ট (২৬টি ক্যাডার)
বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বর্তমানে ২৬টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিচে সম্পূর্ণ তালিকাটি দেওয়া হলো:
সঠিকভাবে বিসিএস ক্যাডার পছন্দক্রম সাজানোর কৌশল
ক্যাডার লিস্ট সাজানো বা পছন্দক্রম দেওয়া বিসিএস আবেদনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার দেওয়া ক্রমের উপরেই আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নির্ভর করে।
- নিজের আগ্রহকে জানুন: আপনি কোন ধরনের কাজ করতে ভালোবাসেন? প্রশাসনিক ক্ষমতা, মাঠপর্যায়ের কাজ, গবেষণাধর্মী কাজ নাকি কূটনীতি? আপনার আগ্রহ অনুযায়ী প্রথমদিকের ক্যাডারগুলো সাজান।
- কাজের ধরণ ও সুযোগ: প্রতিটি ক্যাডারের কাজের ধরণ, পদোন্নতির সুযোগ, সামাজিক মর্যাদা এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার মিল: আপনি যদি কারিগরি विषयों স্নাতক হন, তবে আপনার বিষয় সম্পর্কিত ক্যাডারগুলোকে তালিকার উপরের দিকে রাখতে পারেন।
- পরামর্শ গ্রহণ: সফল বিসিএস ক্যাডারদের সাথে কথা বলুন। তাদের অভিজ্ঞতা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
বিসিএস ক্যাডারদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা
বিসিএস ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নবম গ্রেডে যোগদান করেন। আপনার প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, একজন নবম গ্রেডের কর্মকর্তা নিম্নোক্ত বেতন ও ভাতাদি পান:
- মূল বেতন: ২২,০০০ টাকা (স্কেল: ২২,০০০ – ৫৩,০৬০ টাকা)
- বাড়ি ভাড়া: মূল বেতনের ৫০% (ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য) যা প্রায় ১১,০০০ টাকা।
- চিকিৎসা ভাতা: ১,৫০০ টাকা (নির্দিষ্ট)।
- অন্যান্য সুবিধা: যাতায়াত ভাতা, সন্তানের শিক্ষা ভাতা, উৎসব ভাতা এবং পেনশন সুবিধা।
সব মিলিয়ে একজন নবীন বিসিএস ক্যাডার মাসিকভাবে প্রায় ৩৮,০০০ টাকার বেশি বেতন ও ভাতাদি পেয়ে থাকেন, যা সময় ও পদোন্নতির সাথে বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও সরকারি আবাসন, পরিবহন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো রয়েছেই।
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা
বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
- নাগরিকত্ব: প্রার্থীকে অবশ্যই জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- বয়স সীমা: সাধারণ প্রার্থীদের জন্য বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের জন্য ৩২ বছর।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।
বিসিএস ক্যাডার হওয়া কেবল একটি চাকরি পাওয়া নয়, এটি দেশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত হয়ে সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার একটি সুযোগ। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং সঠিক কৌশল। আপনার ক্যাডার লিস্টটি ভেবেচিন্তে সাজান, নিজের সেরাটা দিয়ে প্রস্তুতি নিন এবং দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অংশ নিন। আপনার স্বপ্ন সফল হোক।
আরও পড়ুন: পেন্ট্রিম্যান: কাজ, যোগ্যতা, বেতন ও চাকরির প্রস্তুতি (সম্পূর্ণ গাইড)

Dhaka Alert একটি তথ্যভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি পাবেন বাংলাদেশের সর্বশেষ চাকরির খবর, ভর্তি তথ্য, শিক্ষা সংবাদ, স্কলারশিপ আপডেট এবং ক্যারিয়ার গাইডলাইন। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি নির্ভরযোগ্য, আপ-টু-ডেট এবং সহায়ক মাধ্যম গড়ে তোলা, যা শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী এবং সাধারণ পাঠকের তথ্য চাহিদা পূরণ করবে।