নাবিজ খাওয়ার উপকারিতা
আপনি যদি নাবিজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তবে আপনারা এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন নাবিজ সম্পর্কে। এই পোস্ট এ আপনারা জানতে পারবেন নাবিজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। নাবিজ সম্পর্কে জানার আগে নাবিজ কাকে বলে সে সম্পর্কে অনেকে জানেন না। শুকনা খোরমাখেজুর সাথে খাঁটি দুধ রাতে গ্লাসে ভিজিয়ে রেখে সকালে মিক্স করে যে শরবত তৈরী হয় তাকে নাবিজ বলে।
নাবিজ এর অনেক পুষ্টি গুন্ আছে। অতি প্রাচীন কাল থেকে এই নাবিজ ব্যবহার হয়ে আসছে। নাবিজ নিয়মিত খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যারা নিয়মিত নাবিজ খান তারা বিশেষ উপকার পান। আবার অনেকে কিশমিশ সাথে গরুর দুধ মিশিয়ে রেখে সকালে খান ,এই কিশমিশ দিয়েও তারা নাবীজ তৈরী করেন। এভাবে দুধের সাথে কিশমিশ বা খেজুর মিলিয়ে খেলে খেজুর বা কিশমিশের পুষ্টিগুণ পানিতে মিশে যায়, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
নাবিজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
ইতিমধ্যে আমরা বর্ণনা করেছি নাবিজ কাকে বলে। যেকোন আমরা আলোচনা করবো নাবিজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে :
১ ) শরীরে শক্তি বাড়াতে নাবিজ : খেজুর ও কিশমিশে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। রাতে খেজুর বা কিশমিশের সাথে খাঁটি গরুর দুধ ভিজিয়ে রেখে সকালে তৈরী হবে নাবিজ। এই নাবিজ সকালে খেলে শরীরে বেশি শক্তি অনুভব করবেন। ফলে সারাদিন কাজ করার পরেও ক্লান্তি অনুভব করবেন না। সকালে খেলে সারাদিনের জন্য শক্তি জোগাতে সাহায্য করে নাবিজ।
২ ) হজমের উন্নতিতে নাবিজ : খেজুর এবং কিশমিশে থাকে প্রচুর পরিমানে ফাইভার। এই খেজুর বা কিশমিশ যখন দুধে ভিজিয়ে নাবিজ তৈরী করে খান এতে আস্তে আস্তে হজমের উন্নতি হয়।নাবিজ হজম শক্তিকে উন্নতি করে ফলে নানারকম প্রদাহ যেমন : গ্যাস, বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা দূর করতে সাহায্য করে। আপনারা যদি এইরূপ সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে নিয়মিত নাবিজ খেতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন।
আরো পড়ুন : কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
৩ ) কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নতি করতে নাবিজ : নাবিজ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। নাবিজ কিডনিকে মজবুত রাখে। কিডনির জন্য অনেক উপকারী এই নাবিজ। কিডনিকে মজবুত রাখে এবং কিডনি থেকে দূষিত বিষাক্ত পদার্থ বের করে কিডনিকে মজবুত রাখে। নাবিজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। কিডনিকে সবল ও সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত সকালে নাবিজ খেতে হবে।
৪ ) হাড়ের শক্তি বাড়াতে নাবিজ : নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নাবিজ একটি পুষ্টিকর খাবার। নিয়মিত এই খাবার খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অনেকে দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাই দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় সমস্যা রোধে নিয়মিত নাবিজ খেতে পারেন কারণ নাবিজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়াম যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় সমস্যা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নাবিজ তৈরী একেবারে সহজ তাই নিয়ম করে নাবিজ খেতে পারেন।
৫ ) ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে নাবিজ : ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে আপনারা নানান রকমের ঔষুধ বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন। এগুলার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি ক্ষতিও আছে। তাই আপনারা এইগুলার উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিয়মিত নাবিজ খেতে পারেন। নাবিজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল রাখে।এছাড়া নাবিজের কোনো ক্ষতি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
৬) রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূরীকরণে নাবিজ : আপনারা অনেকে বিভিন্ন প্রদাহ জনিত কারণে রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন। রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত নাবিজ খেতে পারেন কারণ খেজুর ও কিশমিশে আছে প্রচুর পরিমানে আয়রন যা রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া প্রতিরোধে সহায়ক। এটি রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং শরীরকে সজীব রাখতে সাহায্য করে।রক্তস্বল্পতা দূর হলে শরীরে ক্লান্তি ও অন্যান্য রোগ দূর হবে। তাই রক্তস্বল্পতা দূর করতে নিয়মিত নাবিজ খেতে পারেন।
আরো পড়ুন : দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
৭ ) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নাবিজ : খেজুর ও কিশমিশ দিয়ে নাবিজ তৈরী হয়। আর এই খেজুর ও কিশমিশে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ফলে শরীরে রোগ বালাই কম হয়।তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত নাবিজ খেতে পারেন।
৮) স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও মেধার বিকাশে নাবিজ : দুধ শিশুর মেধার বিকাশে সাহায্য করে। ছোটবেলা থেকে শিশুকে দুধ খাওয়ানো হয় যাতে শিশুর স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও মেধা শক্তি বাড়ে। নাবিজ তৈরী হয় দুধ ,খেজুর অথবা কিশমিশের সংমিশ্রনে। এইটা মেধা ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই শিশু ,ছাত্র ছাত্রী ,যুবক ,বৃদ্ধ সবাই মেধার বিকাশের জন্য নাবিজ খেতে পারেন।
নাবিজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত
এতক্ষন আপনারা জানলেন নাবিজ কাকে বলে এবং নাবিজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা বর্ণনা করবো নাবিজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত :
১ ) নাবিজে ক্যালোরির পরিমান রয়েছে ১৭৭ কিলোক্যালোরি যা প্রতিদিন ১৪% পুষ্টি চাহিদা মেটায়।
২ ) নাবিজে মোট চর্বির পরিমান আছে ০.২ গ্রাম ।
৩ ) মোট সোডিয়াম এর পরিমান ১ মিলিগ্রাম।
৪ ) মোট পটাশিয়ামের পরিমান ৬৯৬ মিলিগ্রাম যা ১৫ % চাহিদা মেটায়।
৫ ) মোট কার্বোহাইড্রেট ৭৫ গ্রাম যা যা দৈনন্দিন ২৫% চাহিদা মেটায়।
৬ ) ডায়েটারি ফাইভার এর পরিমান ৬.৭ গ্রাম যা ২৭ % চাহিদা মেটায়।
৭ ) মোট চিনির পরিমান ৬৬.৭ গ্রাম যা দৈনিক চাহিদা মেটায় ৭৪ % ।
৮) মোট প্রোটিনের পরিমান ২.৫ গ্রাম যা চাহিদার ৫%
৯ ) মোট ভিটামিন বি ৬ এর পরিমান ০.২ মিলিগ্রাম যা ১০ % চাহিদা মেটায়।
১০ ) মোট ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমান ৫৪ মিলিগ্রাম যা চাহিদা মেটায় ১৪ গ্রাম।
১১ ) মোট কপার এর পরিমান ০.৪ মিলিগ্রাম। যা ২০ % চাহিদা মেটায়।
১২ ) লোহা ০.৯ মিলিগ্রাম যা মোট চাহিদার ৫ % মেটায়।
নাবিজ তৈরির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত
নাবিজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। যারা নিয়মিত নাবিজ খান তারা জানেন নাবিজ শরীরের জন্য কতটা উপকারী।নাবিজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলেন কিন্তু নাবিজ কিভাবে তৈরী করা হয় সে সম্পর্কে জানেন না। এখন আমরা চেষ্টা করবো নাবিজ তৈরির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা।
নাবিজ তৈরী করা একেবারে সহজ। প্রথমে খাঁটি গরুর দুধ পাত্রে নিয়ে গরম করে নিবেন। দুধ যতক্ষণে গরম হয় ততক্ষনে খাঁটি খেজুর নিয়ে খেজুর থেকে বিচি আর খেজুর আলাদা করবেন। এই বিচি ছাড়ানো খেজুরের অংশ দুধের মধ্যে রেখে আলতো ভাবে নাড়ান। কিছুক্ষন পরে উঠিয়ে রেখে দিন।
ঠান্ডা হলে রেখে দিতে পারেন সন্ধ্যায় রেখে সকালে খেতে পারেন। অথবা কিছুক্ষন পরে খেতে পারেন।
একই ভাবে কিশমিশ দিয়েও নাবিজ তৈরী করতে পারেন। শুধু খেজুরের পরিবর্তে কিশমিশ ব্যবহার করতে হবে।
এতক্ষন আপনারা নাবিজ খাওয়ার উপকারিতা এবং তৈরির নিয়ম সম্পর্কে জানলেন। আপনারা নিয়মিত নাবিজ খেতে পারেন। নাবিজ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ নানান রকমের উপকার করে। তাই সঠিক নিয়মে নাবিজ তৈরী করে খেতে পারেন। আশা করি অনেক উপকার হবে।