পেটের গ্যাস সম্পর্কে কিছু কথা
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় :অনেকে পেটে গ্যাস সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমাদের দেশে পেটে গ্যাস আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। পেটে গ্যাস নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পেটে গ্যাস হওয়ার বিভিন্ন কারণ হতে পারে। অনেকেই জানেন না কি কারণে পেটে গ্যাস হয়। সাধারণত নিয়ম মাফিক জীবন যাপন না মেনে চলা ,পুষ্টিকর ও ভিটামিন যুক্ত খাবার না গ্রহণ করে খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দিন দিন দুর্বল হয়ে যায়।
পরিপাকতন্ত্র দিন দিন দুর্বল হওয়ার কারণে অনেকে বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগে থাকেন যেমন বদ হজম ,বিভিন্ন প্রকার পেটের আক্রান্ত সমস্যা ,এসিডিটি সহ অনেক ধরণের রোগ। এইসব রোগের জন্য দায়ী এই পেটের গ্যাস। অনেকে হয়তো জানেন না পেটের গ্যাস হওয়ার ফলে এই ধরণের সমস্যা হতে পারে।
মাঝে মাঝে পেট ফুলে উঠে এই ফুলে উঠার প্রধান কারণ গ্যাস। অন্ত্র ও পেটে গ্যাস জমা হলে পেট ফুলে যায়।
যেসব কারণে পেটে গ্যাস হতে পারে
শিশু থেকে বৃদ্ধ এমন মানুষ নাই এখন পেটে গ্যাসএ আক্রান্ত হন না। সবারই কম বেশি গ্যাস আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অনেকে জানেন না কিভাবে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়। আগে আমাদের জানতে হবে কি কারণে পেটে গ্যাস হয়।
বাইরের ভাজা পোড়া পছন্দ হয় না এমন মানুষ খুব কম আছে। মুখ রোচক এই সব খাবার খেয়ে পেটে গ্যাস হতে পারে।
অনেকে নেশার কারণে মদ্যপান করে থাকেন। মদ্যপান করার কারণে পেটে গ্যাস হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশিদের অনেক মানুষ ধূমপান করে। পেতে গ্যাস হওয়ার কারণে ধূমপান অনেককাংশে দায়ী। অনেকে হয়তো জানেন না এই সব বাজে অভ্যাসের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণ গুলা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় জানতে হলে আগে জানতে হবে পেটে গ্যাস কেন হয়। তাই ধারাবাহিক ভাবে পেটের গ্যাস সম্পর্কে আলোচনা করে যাচ্ছি আসা করি আপনাদের উপকার হবে।
খাদ্য অভ্যাসের কারণে :
কম আঁশযুক্ত খাবার :আমরা যারা প্রতিদিন কম আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করি না তারা চেষ্টা করবো প্রতিদিন কম আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার। কম আঁশযুক্ত খাবার যেমন সবুজ শাক সবজি ,ফল ,ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এই সব খাবার না খেলে পেটের সমস্যা ,গ্যাসের সমস্যা ,বদহজমের সমস্যা হতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক সবজি ,ফল ,ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
মশলাদার বা চর্বিযুক্ত খাবার:অতিরিক্ত মশলাদার বা চর্বিযুক্ত খাবার খেলে বদ হজম ,এসিডিটি ,গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ,লিভার ইনফেকশন হতে পারে। তাই সবার উচিত অতিরিক্ত মশলাদার বা চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা।
মানসিক কারণে :
মানসিক বা উদ্বেগ : অনেকে মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। মানসিক সমস্যা বা উদ্বেগের কারণে হজমে সমস্যা হতে পারে। এতে করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
জীবনধারণের পরিবর্তন :
শুয়ে ,বসে ,ঘুমিয়ে থাকা : দৈনন্দিন কাজকর্ম ,বা শারীরিক পরিশ্রম না করে শুয়ে ,বসে ঘুমিয়ে থাকলে হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করে থাকে। আর হজম পক্রিয়া ধীরগতি হলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও ধূমপান করলে : অনেকে আছে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেন এছাড়া অধিকাংশ মানুষ ধূমপান করে থাকে ,এতে করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম না করা : অলসতার কারণে অনেকে ব্যায়াম করে না। অনেকে মাঝে মাঝে ব্যায়াম করেন। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে শরীরে গ্যাসের সমস্যার সাথে নানা রকম রোগ দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য সংক্রমণ :
বিভিন্ন সংক্রমণ জাতীয় রোগ :ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের মতো ,গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ : অনেকে স্বল্পমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন ,আবার অনেকে দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD),ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস),সিলিয়াক ডিজিজ ,ক্রোনস ডিজিজ দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।
ঔষধ : অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ,কিছু ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন সহ কিছু ওষুধ,মৌখিক গর্ভনিরোধক ,ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা আলসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অন্যান্য যেসব কারণে :উপরে অনেক গুলা কারণ ব্যাখ্যা করা হইছে এছাড়াও অনেক অনেক কারণ থাকতে পারে যে কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে। দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় জানার আগে জানা দরকার কি কারণে পেতে গ্যাস হতে পারে। আরো কিছু কারণ নিচে ব্যাখ্যা করা হলো
বংশগত কারণে : বংশগত কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধি,GERD বা প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ পরিবারের কারোর থাকলে বংশগত কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।
বয়সজনিত কারণে : বয়স্ক অনেকেই আছেন যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন। মূলত হজমের কার্যকারিতা পরিবর্তনের কারণে এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া খাদ্য তালিকা পরিবর্তন ,চিকিৎসার পরিবর্তন ,আবহাওয়া পরিবর্তন হঠাৎ ব্যায়াম বন্দ করে দেওয়া ইত্যাদি কারণে সৈস্থ্যের উপর মারাত্মক পরিবর্তন আনে।
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম যেসব কারণে পেটে গ্যাস হয়। আশা করি আপনাদের তথ্যগুলা উপকারে আসবে। এখন আমরা আলোচনা করবো দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়।পেটে গ্যাস হলে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা না করে ডক্টর এর কাছে যায় অথবা ঔষুধ কিনে খাই। অনেকে জানেন না পেতে গ্যাস হলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা যায়। ঔষুধ এর উপর নির্ভর না করে ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায় গ্রহণ করে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানো যায়। নিচে এইসব বিষয় আলোচনা করা হলো।
ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া : যেসব খাবারে ফাইবার আছে এমন খাবার খেতে পারেন এতে করে গ্যাসের সমস্যা অনেকটা ধুর হবে। শাকসবজি ,হোল গ্রেইনে ফাইবার যুক্ত থাকে তাই এই সব খাবার বেশি পরিমানে খেতে পারেন। নারীদের প্রতিদিন ২৫ গ্রাম ও পুরুষদের ৩৮ গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত।
মেথি খেতে পারেন : অনেকে জানেন না মেথির উপকারিতা সম্পর্কে। মেথি এবং মেথি ভিজানো পানি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগেন তারা চাইলে মেথি খেতে পারেন। মেথি শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা আলাদা একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছি আপনারা চাইলে দেখে আসতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি খাওয়া : গ্যাসের সমস্যা দূরীকরণে সব চাইতে উপকারী ও প্রাকৃতিক উপায় হলো প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়া। আপনারা যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করে তবে আপনারা গ্যাস মুক্ত থাকতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি খালি পেটে পানি পান করেন তবে গ্যাসের জন্য বিশেষ উপকার পাবেন।
নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম করা :গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত হাটতে পারেন এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম করা শরীরের জন্য উপকারী। আর নিয়মিত হাঁটলে এবং ব্যায়াম করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়।
কলা খাওয়া : প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আপনারা কলা রাখতে পারেন। আপনারা অনেকেই জানেন না কলা থেকে পেটের সমস্যা অনেকটা কমে যায়। নিয়মিত কলা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়।
রসুন : রসুন মানব শরীরে অনেক উপকার করে থাকে। এই রসুন পরিপাকতন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী। ভাতের সাথে রসুন খেতে পারেন অথবা রসুন ভর্তা করে খেতে পারেন। এছাড়া রসুনের চপ করে ও খেতে পারেন। সকালে খালি পেতে রসুন খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। এই রসুন খেলে গ্যাসের উপকারিতা পাওয়া যায়।
আমলকি : আপনারা অনেকে আমলকির গুনাগুন সম্পর্কে জানেন। আমলকি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যারা কোষ্টকাঠিন্যে ভুগে থাকেন তারা নিয়মিত আমলকি খেতে পারেন। আমলকি পেট পরিষ্কার করে দেয় যার জন্য আমলকি খেলে গ্যাসের সমস্যা ধুর হতে পারে।
আদা : আদা অম্বলের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। আদা খুব তাড়াতাড়ি পেটে হজম হতে সাহায্য করে। খাওয়ার কিছুক্ষন আগে অদা কুচো কুচো করে খেতে পারেন এতে করে গ্যাসের জন্য অনেক উপকার পাবেন।
টক দই : টক দই গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। মাঝে মাঝে টক দই খেতে পারেন। টকদইয়ে থাকে ক্যালসিয়াম যা গ্যাস দূরীকরণে সাহায্য করে।
তুলসী পাতা : তুলসী পাতা খেতে পারেন কারণ এই পাতা পাকস্থলীতে শ্লেষ্মার মতো এক ধরণের পদার্থ উৎপাদনে সাহায্য করে।তুলসী পাতা চা বানিয়ে খেতে পারেন। যেকোন চা বানাবেন তখন এই চায়ের মধ্যে তুলসী পাতা ছেড়ে দিন। এর পরে ফুটানো শেষে খালি পেটে এই চা খেতে পারেন। এতে চায়ের স্বাধ বেড়ে যাবে সাথে গ্যাসের সমস্যা দূর হবে।
এই সব খাবার খেতে পারেন এই সব খাবার দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় ১০০% কার্যকরী উপায়। এছাড়া এই সব খাবার প্রকৃতিক খাবার যার কারণে এই সব খাবার এর কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নাই। তাই নিশ্চিন্তে এই সব খাবার খেতে পারেন।
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় যেসব বদ অভ্যাস দূর করতে হবে
অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও ধূমপান ত্যাগ : আপনারা যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে কিছু বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এর মধ্যে অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও ধূমপান গ্রহণ করলে তা ত্যাগ করতে হবে। এতে আপনারা সুস্থ জীবন পাবেন।
মশলাদার বা চর্বিযুক্ত খাবার : অতিরিক্ত মশলাদার বা চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে তা পরিহার করতে হবে। এতে গ্যাসের সমস্যা দূর হবে।
শুয়ে ,বসে ,ঘুমিয়ে থাকা : যারা শুয়ে ,বসে ,ঘুমিয়ে থাকেন তারা নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলা করতে পারবেন। এতে করে অনেক উপকার পাবেন।
ঔষধ সেবনে : কোনো রোগে আক্রান্ত হলে MBBS ডক্টর এর পরামর্শে ঔষুধ সেবন করতে পারেন।
এতক্ষন আপনাদের দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছি আসা করি এই টিপস অনুসরণ করলে আপনারা ১০০% গ্যাস্ট্রিক মুক্ত জীবন পরিচালনা করতে পারেন। এইসব টিপস ১০০% কার্যকরী ও পরীক্ষিত টিপস। এছাড়া যদি অন্য কোনো টিপস সম্পর্কে জানতে চান অবশ্যয় আমাদের মেসেজ দিবেন। আমরা চেষ্টা করবো সঠিক তত্থ দিয়ে আপনাদের সাহায্য করতে।
3 thoughts on “দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় ১০০% কার্যকরী উপায়”